সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সেই প্রাচীন কাল থেকে সমাজ বদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে।একসাথে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নিজেদেরকে কিছু নিয়ম কানুনের মধ্যে আবদ্ধ করেছে যাতে করে একজনের কাজের দ্বারা অন্য কারোর কোন প্রকার ক্ষতি সাধিত না হয় বা কারো অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন হস্তক্ষেপ না হয়।
এই মনুষ্য সৃষ্ট নিয়ম-কানুন সবার জন্য সমান,কেহ তা লঙ্ঘন করলে বা করার চেষ্টা করলে তার জন্য রয়েছে কিছু শাস্তির ব্যবস্থা। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে,সবার জন্য প্রযোজ্য কতিপয় এসকল নিয়ম কানুনকেই আইন বলা হয়। শান্তিপূর্ণ ভাবে জীবন ধারণের জন্য প্রত্যেকটা সমাজ,দেশ এবং রাষ্ট্রের জন্য রয়েছে কতকগুলো নিয়ম-কানুন বা আইন।মানুষ যাতে ক্ষমতা বহির্ভূত হয়ে কোন কাজ না করতে পারে, সেটার নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে যতগুলো আইন আছে তা যে সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল এমনটা নয়।একটা আইন তৈরীর প্রয়োজনীয়তা কখন তৈরী হয়? যখনই দেখা যায় কোন একটা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বা কোন একটা অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে তখনই নতুন করে আইন তৈরীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় অথবা ঐ বিষয়ে পৃর্বেই কোন আইন থেকে থাকলে তা পরিবর্তন করে পুনরায় নতুন বিধান করা হয়।সুতরাং, মানুষ নিজেদের প্রয়োজনেই তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে রেখে অপরাধ নিবারণের মধ্যমে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে তার জন্যই আইন।
সাধারণ মানুষের মধ্যে আইন সম্পর্কে একটা বিরূপ মনোভাব রয়েছে।অনেকেই মনে করেন আইন একটা জটিল ও কঠিন বিষয়।হ্যাঁ আইনের কিছু বিষয় জটিল বটেই।তা বুঝতে হলে,জানতে হলে ঐ বিষয়টার উপর অভিজ্ঞ হতে হয়।ঐ বিষয়গুলোর সমাধানের জন্যেও আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ আছেন তাই সকলকে তা না জানলেও চলবে।কিন্তু আইনের যে বিষয়গুলো আপনার অধিকার নিয়ে কথা বলে,যে বিষয়গুলো না জানার কারণে আপনার প্রতি অন্যায়টা এতো সহজে হচ্ছে, আপনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সে সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন বা কতটুকু সচেতন?
আইনের একটা প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো যে,আইন সবার জন্য সমান কিন্তু আইনের তো এই ক্ষমতা নেই যে সে নিজে গিয়ে কারো অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবে।তাই নিজ-নিজ দায়িত্বেই তা চইতে হবে এবং আদায় করে নিতে হবে।কিন্তু কেউ যদি নাই জানে তার কি অধিকার আছে,কখন তা লঙ্ঘিত হচ্ছে, কোথায় ও কার কাছে প্রতিকার চাইতে হবে সে কি কখনো সেই বিষয়টা দাবী করতে পারবে।আইনের আরেকটা প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো,যে ব্যক্তি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় তার জন্য আইন নয়।অর্থাৎ কেউ যদি নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকে তহলে আইন তার জন্য কিছুই করবে না এবং এই দায়টাও কোনভাবে আইনের উপর বর্তায় না।
একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, সমাজে যে ব্যক্তি দূর্বল,অজ্ঞ এবং অসচেতন তার প্রতিই অন্যায়-অবিচার বেশি হয়।কিন্তু যে ব্যক্তি নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন তার প্রতি অন্যায় করার পূর্বে দূষ্কূতিকারী দুবার ভাববে এইটা ভেবে যে ঔ লোকের প্রতি অন্যায় করা হলে সে তো ছেড়ে দিবেনা।তাহলে এই ক্ষেত্রে অন্যায় করার প্রবণতার গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হচ্ছে।
তাই প্রত্যেক মানুষকে তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই আইনে তাদের কি কি অধিকার রক্ষিত আছে,কি ভাবে, কখন ও কতটুকু তা প্রয়োগ করতে পারবে সে সম্পর্কে নিজ উদ্যোগেই জানতে। এটা হতে পারে অপরাধ নিবারণের অন্যতম একটা হাতিয়ার। সমাজে অপরাধ প্রবণতা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা রোধ করতে হলে আইন সম্পর্কে এখনই সম্যক ধারণা দিতে হবে তা না হলে অপরাধের মাত্রার লাগাম টেনে ধরা অনেকটাই দুষ্কর হবে।
আইন সম্পর্কে মানুষের ব্যপক অজ্ঞতার কারণ হচ্ছে আইনের জটিল উপস্থাপনা। আইনের বিধান যতনা জটিল তার থেকে বেশী জটিলও কঠিন করে উপস্থাপনা করার কারণে মানুষ তা জানার আগ্রহ দেখায় না। এতে করে মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারছে না এমনকি তা লঙ্ঘিত হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।ফলে যে উদ্দেশ্য আইন তৈরী হয় তার বেশিরভাগই অপূর্ণ থেকে যায়,আর অপরাধ প্রবণতা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।তাই অধিকার রক্ষা ও অপরাধ নিবারণে আইন সম্পর্কে সকলকেই সম্যক ধারণা নিতে হবে, সেজন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা এখনই প্রয়োজন তা হলো-
১.সহজ ভাবে আইনের উপস্থাপনা করা, যাতে করে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বোধগম্য হয়।
২.আইন,আদালত,পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে বিরূপ মনোভাব আছে তা দূর করে আইনি সহায়তা নিতে উৎসাহিত কর।
৩.মানুষের অধিকার সংক্রান্ত যেসকল বিধান প্রত্যেকের জানা দরকার তা জানাতে হবে,নিজ দায়িত্বে জানতে হবে।
৪.মানুষকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে সেজন্য আইনের প্রয়োগ ক্ষেত্র বাড়াতে হবে।
৫.মানুষ যাতে তার আইনগত অধিকার সমর্পকে জানতে পারে সেজন্য এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।
সময় এখন সঠিক আইন যেনে আইনগতভাবে নিজের অধিকার রক্ষা করার।
আইন হোক সর্বজনীন।